বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শনিবার রাতে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ দিয়েছেন।বঙ্গভবন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশের তৃতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান।
এর আগে শনিবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। শনিবার দুপুরে আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এছাড়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করার পর আপিল বিভাগের ছয় জন বিচারপতিও পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন- বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম,বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি কাশেফা হোসেন ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
এরআগে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে শনিবার সকাল ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রঙ্গনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে নিজেই সাংবাদিকদের জানান।
এদিন দুপুরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌচেছে। আমরা উপযুক্ত প্রসেজিংয়ের জন্য কাল বিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাঠে পাঠিয়ে দিব। আমি আশাকরব এটি খুবদ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, পদত্যাগ পত্রে ওবায়দুল হাসান লিখেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডসমূহ রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেজ টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদের শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজ কোর্টগুলো, রেকর্ড রুমসমূহ রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবরে তাঁদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম নিয়োগ পেয়েছে বলে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট সুত্রে জানা যায়। তবে এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি বলে জানিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শনিবার আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তাই এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশ করা থেকে বিরত থাকতে আইন মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি আশফাকুল ইসলামকে ফ্যাসিবাদের দোসর উল্লেখ করে তাকে প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়েছেন বেষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নিয়োগ বাতিল করে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগদানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম একজন ফ্যাসিবাদের দোসর, তাকে ছাত্র-নাগরিক প্রত্যাখ্যান করছে। অনতিবিলম্বে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে।
এর আগে শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তার পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
অন্যাদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের সাতজন বিচারপতি। আজ রোববার তাদের নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিচারপতি একে এম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান, বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল কবির, বিচারপতি শেখ আব্দুল আওয়াল, বিচারপতি মামনুন রহমান।
এর আগে শনিবার সকালে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যদের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। পরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এসে প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সকাল ১০টা থেকে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কোর্ট প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় আইনজীবীরাও তাদের সাথে বিক্ষোভে অংশ নেন।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক হাজার শিক্ষার্থী হাইকোর্টে এলাকার সুপ্রিম কোর্টের এনএক্স ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও সেখানে অবস্থান করছেন। এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সুপ্রিম কোর্ট এলাকার নিরাপত্তায় নিয়জিত থাকতে দেখা যায়।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে তার পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতো হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা প্রধান বিচারপতিসহ দলবাজ বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করব। দলবাজ বিচারপতিদের সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটন করা হবে।
বেলা ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিজেই সাংবাদিকদের কাছে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপর বেলা দুইটার দিকে উপস্থিত সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুরোধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হাইকোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান। ফুল কোর্ট সভা ডেকে স্থগিত: সব বিচারপতিদের অংশগ্রহণে প্রধান বিচারপতি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টে ফুলকোর্ট সভা ডাকেন। পরে ওই ফুলকোর্ট সভা স্থগিত করা হয়। ফুলকোর্ট সভা ডাকার পরপরই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম ও যেকোনো প্রকার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া আসিফ মাহমুদ। শনিবার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, পরাজিত শক্তির যেকোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের মদতপুষ্ট ও নানা অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সাথে কোনোপ্রকার আলোচনা না করে ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছেন। পরাজিত শক্তির যেকোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনতিবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুলকোর্ট মিটিং বন্ধ করুন।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে, ফুল কোর্ট সভা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল সোয়া ১০টার ফুল কোর্ট সভা হবে না বলে জানানো হয়।