ঘটনাটি ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত একটি ঘটনা, যা ‘দ্য গ্রেট এস্কেপ’ নামে সুপরিচিত।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘স্টালাগ লাফ্ট ৩’ ছিলো জার্মানদের বানানো আরেকটি যুদ্ধবন্দীদের ক্যাম্প। যেখানে বিমান বাহিনীর লোকদেরকে বন্দী হিসেবে রাখা হতো। এখানকার বন্দীদের মাঝে ছিলেন রজার জয়েস বুশেল। তিনি ছিলেন অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে বুশেল এখান থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেন। তবে একটি নয়, তিনটি; একা নয়, সবাইকে নিয়ে। এগুলোর সাংকেতিক নাম ছিলো টম, ডিক ও হ্যারি।
রজার জয়েস বুশেল
সুড়ঙ্গগুলোর জায়গা এমনভাবে নির্বাচন করা হয়, যেন সেগুলো প্রহরীদের চোখে সহজে ধরা না পড়ে। পেরিমিটার মাইক্রোফোনেও যাতে তাদের অস্তিত্ব ধরা না পড়ে, সেজন্য ভু-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ ফুট নিচে খোঁড়া হয়েছিলো প্রতিটি সুড়ঙ্গ। এগুলো আকারেও ছিলো বেশ ছোট। কোনো রকমে শরীর ঢুকিয়ে এগিয়ে নেবার মতো। তবে ভেতরে খননকাজের সুবিধার্থে এয়ার পাম্প ও ওয়ার্কশপ বানানো হয়েছিলো। ভেতরের বালি যাতে ধ্বসে না পড়ে, সেজন্য ব্যবহার করা হয়েছিলো কাঠ। নিজেদের খাটের কাঠের পাশাপাশি সারা ক্যাম্প থেকে বিভিন্নভাবে কাঠ জোগাড় করেই করা হয়েছিলো এমনটি। কাজের সুবিধার্থে সুড়ঙ্গের ভেতরে যুদ্ধবন্দীরা বৈদ্যুতিক বাতি লাগিয়েছিলো। মাটি আনা-নেয়ার সুবিধার্থে ব্যবহার করেছিলো ছোট গাড়ি। বিভিন্ন খনিতে রেললাইনের উপর দিয়ে চলা ছোট গাড়িতে করে মালামাল আনা-নেয়ার মতো। পাঁচ মাস ধরে এ গাড়ি দিয়েই প্রায় ১৩০ টন মাটি সরানোর কাজ করা হয়েছিলো!
১৯৪৪ সালের মার্চে ‘হ্যারি’র খনন সম্পন্ন হয়। কিন্তু একটা ঝামেলা বেঁধে যায় তখন। এতদিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করা যুদ্ধবন্দীদের কয়েকজনকে এ ক্যাম্প থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বন্দীরা অপেক্ষা করতে থাকলেন অমাবস্যার অন্ধকারাচ্ছন্ন এক রাতের জন্য। মার্চের ২৪ তারিখে এসে যায় কাঙ্ক্ষিত সেই সময়। সুড়ঙ্গপথে এক এক করে পালাতে থাকেন যুদ্ধবন্দীরা। এভাবে চলে যান ৭৬ জন। এরপরই বাঁধে মস্ত বড় এক ঝামেলা। সময় তখন ২৫ তারিখের ভোর ৫টা। ৭৭তম বন্দী সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়া মাত্রই ধরা পড়ে যান এক প্রহরীর নজরে। এরপরই শুরু হয় পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের খোঁজে সাঁড়াশি অভিযান। ৭৬ জনের মাঝে ধরা পড়েছিলেন ৭৩ জনই। এদের মাঝে ৫০ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো। বাকিদের ভাগ্যে নেমে এসেছিলো পুনরায় বন্দীত্ব ও নির্যাতনের কালরাত্রি।
বেঁচে ফিরে আসা একমাত্র ব্যক্তি credit: BBC
এরপর হিসেব করে দেখা যায়, এ সুড়ঙ্গ খননের জন্য ৪ হাজার খাটের পাটাতন, ৯০টি ডাবল বাঙ্ক খাট, ৬৩৫টি ম্যাট্রেস, ১৯২টি বেড কভার, ১৬১টি বালিশের কভার, ৫১টি ২০ জন একসাথে খেতে পারার মতো টেবিল, ১০টি সিঙ্গেল টেবিল, ৩৪টি চেয়ার, ৭৬টি বেঞ্চ, ১ হাজার ২১২টি কোলবালিশ, ১ হাজার ৩৭০টি কাঠের তক্তা, ১ হাজার ২১৯টি ছুরি, ৪৫৮টি চামচ, ৫৮২টি কাটা চামচ, ৬৯টি ল্যাম্প, ২৪৬টি পানির বোতল, ৩০টি কোদাল, ১ হাজার ফুট বৈদ্যুতিক তার, ৬০০ ফুট দড়ি এবং ৩ হাজার ৪২৪টি তোয়ালে ব্যবহার করা হয়েছিলো!