গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে কুয়েতের আল কাবাস পত্রিকার সুত্র ধরে বাংলাদেশের মানবজমিন পত্রিকা নিউজ করে” কুয়েত থেকে বাংলাদেশী এমপি লাপাত্তা”। এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালের শুরু এখান থেকেই।
এরপর গত ৬ জুন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির কয়েকজন শ্রমিকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় পাপুল এমপিকে। আরব নিউজের সুত্রে এই নিউজ ছাপা হয় বাংলাদেশে, কিন্তু তাদের নিজস্ব কোন সোর্স ছিলোনা, এখনো নেই। বাংলাদেশে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যে খরা ছিলো, তা কাটিয়ে উঠতে পাপুল এমপিকে বলি দেয় বাংলাদেশী মিডিয়া, শুরু হয় মিডিয়া ট্রায়াল।
এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন বলেন” বাংলাদেশে এখন খুব বেশি পরিমাণে চলছে মিডিয়া ট্রায়ালের সংস্কৃতি। এখানে নেই কোনো সেন্সরশিপের তোয়াক্কা, আছে অবাধ স্বাধীনতা। আমরা অন্যকে অসম্মান করতে পেরে আনন্দ পাই, কখনও জোটবেঁধে, দলবেঁধে অসম্মান করি। আমরা ক্রমাগত অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি। আমরা সবাই নিজেদের বিচারক ভাবি’।
‘অন্যের বিষয়ে সহজেই জাজমেন্টাল হয়ে পড়ি। সামাজিক মাধ্যমগুলো (বিভিন্ন ব্লগ, ফেসবুক, পেজ) শুধুমাত্র বিরোধিতা করেই মানুষ ক্ষান্ত হচ্ছে না, করছেন গালিগালাজ, দিচ্ছে নানা কর্মসূচি। বিশেষ করে হুজুগে পড়ে নানা ধরনের গুজব/মিথ্যা সংবাদ/রিপোর্ট শেয়ার দিচ্ছে,।এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জারি আছে ফেসবুকে ট্রায়াল। এখন একটা কিছু হলেই লোকজন সেটিকে ফেসবুকে নিয়ে যাচ্ছে, সামাজিক ট্রায়ালের জন্য। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলো, সঙ্গে সঙ্গে সেই অভিযোগের তদন্ত কিংবা আইনগত প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার আগেই হয়ে যান তিনি আসামি এবং সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই বিষয়ে রায় দেয়ার জন্য। তারপর শুরু হচ্ছে সেখানেই সেই ব্যক্তির সামাজিক মৃত্যু’।
৭ জুন বাংলাদেশের ঢাকা ট্রিবিউন রিপোর্ট করে “মানব পাচারের অভিযোগে লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কুয়েতে গ্রেফতার” অথচ তার বিরুদ্ধে কুয়েতে মানব পাচার নিয়ে কোন মামলাই হয়নি। শুরু হলো বাংলাদেশে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে নানা মনগড়া সংবাদ পরিবেশন। ৭ জুন দৈনিক ইত্তেফাক লিখলো মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে সংসদ সদস্য কাজী পাপুল গ্রেফতার।
মানব পাচার আর অর্থ পাচারের কোন অভিযোগেই পাপুল এমপি’র বিরুদ্ধে দেয়া হয়নি, সেখানে কিছু শ্রমিক তাদের আকামা বা রেসিডেন্সি নবায়নে অতিরিক্ত টাকা দাবী করার কারণে শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, সেই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে কুয়েত সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে, কিন্তু সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, উল্টো যারা মিথ্যে সাক্ষী দিয়েছে, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
২ জুলাই দৈনিক দেশ রুপান্তর রিপোর্ট করে, “টাকা ছড়িয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের পকেট ভরেন এমপি পাপুল” কিন্তু শহিদ পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেছেন আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন ভাবে শক্তিশালী করতেই পাপুল অর্থ ব্যায় করেছেন, কারো পকেট ভরতে নয়। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে উক্ত রিপোর্টে এমপি পাপুলের স্ত্রীর যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তা তিনি কোনভাবেই দেননি।
কুয়েতের সিআইডি এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অভিযোগ বা মামলা পাপুল এমপি’র বিরুদ্ধে দায়ের করেনি, কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো শাস্তির ধরন কি হতে পারে, সেটি নিয়ে রিপোর্ট করছে। ২ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিন “কুয়েতে অভিযোগ প্রমাণ হলে কতদিন জেল হতে পারে এমপি পাপুলের? এই শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে।
প্রতিদিনই ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া শহিদ পাপুলের নামে গল্প নির্ভর রিপোর্ট প্রকাশ করছে। মিডিয়ার স্বাধীনতা মানে কি, মিডিয়া ট্রায়াল দিয়ে একজন জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা? এই প্রশ্ন রেখেছেন এমপি পাপুলের পরিবারে সদস্যরা।
এনকে