একদিন নদীও রুখে দাঁড়াবে;
তার প্রতি হওয়া সব অবিচার দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেবে নদী।
সব বৈরিতার জবাব দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিতে
প্রবল আক্রোশে ধেয়ে আসবে
অকৃতজ্ঞ মহানগরীর দিকে;
না, সেদিন কোনো উচ্ছেদ অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না—
যন্ত্রচালিত শক্তিধর কোনো বুল্ডোজারেরও প্রয়োজন হবে না সেদিন;
প্রয়োজন হবে না পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা সংবিধান স্বীকৃত কালাকানুনের—
প্রয়োজন পড়বে না নদীরক্ষা জাতীয় কমিটির
কিংবা কোনো চাটুকার সংবাদকর্মীর।
না, সেদিন নদীবক্ষে কোনো
নেতার বাড়ি থাকবে না;
থাকবে না কোনো দখলদারের পুঁতে আসা পিলার।
অচল আইন আর ভূয়া কাগজের দোহাই পাড়বে কেউ,
এমনকি নদীকে একটি গালি পর্যন্ত দেবে না মানুষ।
চেয়ে চেয়ে দেখবে বহমান স্রোতের
‘বাঁকে বাঁকে রোষে মোচড় খাওয়ার দৃশ্য।’
শোনো মানুষ, একদিন নদীই রুখে দাঁড়াবে;
তার প্রতি হওয়া সব বৈরিতাকে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেবে সে।
নদীবক্ষ ভরাট করে করে
যে মহানগর বিস্তৃত হয়েছে,
নদী তা পুনর্দখল করবে;
নদীবক্ষে নির্বিচারে যে বর্জ্য-বিষ্ঠা ফেলা হয়েছে
নদী তা প্রবল আক্রোশে ছুঁড়ে দেবে
মন্ত্রী, আমলা, কালো টাকার আড়ৎদার আর কারখানা মালিকদের বহুতল ভবনের দিকে।
নদী নিজেই তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনবে;
হাজারটা ব্যর্থ অভিযান দেখে দেখে বড়ো বেশি
ক্লান্ত এখন পদ্মা-মেঘনা-যমুনা….
শোনো মানুষ, বুড়িগঙ্গা ফুঁসছে!
একদিন সেও রুখে দাঁড়াবে:
তার প্রতি হওয়া সব বৈরিতাকে দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেবে সে—
পাড়ে পাড়ে আবার জেগে উঠবে
সবুজের সমারোহ, কাশের মিছিল, গোখরোর ফণা….
পাখিরা উড়বে খুব;
সবুজ-সতেজ পাখি,
কালোরঙা পানকৌড়ি আর শালিখের ঝাঁক….।
শোঁ-শোঁ করে বাতাস বইবে নদীতে,
প্রবল স্রোতে নদী তার যৌবনে ফিরে যাবে।
যৌবনে যেমন করে ফুলে ফুলে ওঠে নারী
প্রণয়সঙ্গমে বাষ্পরুদ্ধ চিৎকার ও শিৎকারে ভরে তোলে নিভৃত গৃহ, তেমনি….
তেমনি যৌবন ফিরে পেয়ে নদীও মাতম তুলবে—
মাতিয়ে তুলবে অববাহিকা, চরাচর ও নিভৃত পাহাড়ের কোল;
আর সে তার সমুদয় ঘৃণা উগরে দেবে
বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়া স্বার্থান্ধ রাজনীতিবিদের প্রতি;
বিশ্বাস করুন, নদী একদিন রুখে দাঁড়াবে;
সেদিন থেকে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকবে
কথিত নদীরক্ষা আইন,
অচল হয়ে পড়বে— বন, পরিবেশ, নৌ-পরিবহণ
ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
নদী কারো নয়,
হ্যাঁ, নদী কারো বাপের সম্পত্তিও নয়
আদিতে কারো বাপ-দাদার কেটে যাওয়া খালেরও চওড়া-প্রস্থ রূপ নয় নদী;
তবে এতো কিসের দখলদার!
রে শয়তান, নদী ফুঁসছে:
তার প্রতি হওয়া সব বৈরিতার জবাব দেবে সে।
তার বুকে নির্বিচারে যে ময়লা ফেলা হয়েছে
সে তা ছুঁড়ে দেবে লোকালয়ে, শহরে,
সিটি কর্পোরেশনের বহুতল ভবনের দিকে;
তার বুকে যে পিলার পোঁতা হয়েছে,
ভবন করা হয়েছে–
সেই পিলার ও ভবনসমেত
দখলী জমি পুনরুদ্ধার করবে নদী।
ছলাৎছলাৎ, শোঁ-শোঁ আর ঝমাঝম শব্দে
কেঁপে উঠবে মহানগর, মানুষের বসতি;
শোনো দখলদার, নদী ফুঁসছে।
নদীবক্ষে ড্রেজার কেন?
নদী তো তোমরাই ভরেছো নাকি!
ড্রেজার তুলে আনো হে মানুষ,
তুলে আনো সিমেন্টের বস্তা, নরকঙ্কাল আর পাথরের পিলার;
নদী ফুঁসছে।
নদীবক্ষ ভরাট করে করে
যে নকল ওষুধের কারখানা করা হয়েছে,
যে মানববসতি স্থাপন করা হয়েছে
এবং যে মহানগর গড়ে তোলা হয়েছে,
নদী তা পুনর্দখল করবে।
ছলাৎছলাৎ ছন্দ তুলে
কাঁটাতারের সীমানা ভেঙে
মানুষের মানচিত্রে
জালের মতো করে ছড়িয়ে পড়বে নদী।
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-মহানন্দা-ধলেশ্বরী….