দেশ ছাড়ার চেষ্টায় রয়েছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগীরা। শুক্রবার (৯ আগস্ট) আইসিটি অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রের দেওয়া তথ্য বলছে, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন, পলকের বাল্যবন্ধু ও সাবেক পিএস আব্দুল বারি তুষার। তিনি পলিসি অ্যাডভাইজার হিসেবেও কাজ করেছেন। সাবেক এই ট্যাক্স ক্যাডার কয়দিন আগে বিসিএসের চাকরি ছেড়েছেন। অভিযোগ আছে তিনি পলকের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী। তথ্যমতে, আব্দুল বারি তুষার অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার স্ত্রী ড. সিরাত মাহমুদা প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব।
এ তালিকায় দ্বিতীয়তে রয়েছেন, সজিব ওয়াজেদ জয়ের বন্ধু এবং এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরি। অভিযোগ রয়েছে অনেক অপকর্মের মূল হোতা আনির অবৈধভাবে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।
এ তালিকায় রয়েছেন, হাই-টেক পার্কের সাবেক এমডি ডা. বিকর্ন কুমার ঘোষ। তিনি ইনফো সরকার প্রকল্পের পিডি ছিলেন। তার প্রকল্প নিয়েই দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমান-আনিসুলের ভাগাভাগির ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছিলো। এখানে দুর্নীতির পরিমাণ এত বেশি যে, এর অংক বের করতে ১০ জন লাগবে। তিনি আন্দোলনের শুরুতেই দুই মেয়েকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি এখন পালানোর অপেক্ষায় রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে গুঞ্জন উঠেছে।
পলকের সাবেক এপিএস, বর্তমানে ডাটা সেন্টারে কর্মরত রঞ্জিত কুমার। জুতা সেলাইয়ের কাজ করা এই মুচির ছেলে এখন শত কোটি টাকার মালিক।
এ ছাড়া পলকের বর্তমান এপিএস রাকিবুল হাসান এবং পলকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাদ্দামও দেশ ছাড়ার চেষ্টায় রয়েছেন। যদিও গুঞ্জন উঠেছে তারা দুইজনই ইতোমধ্যে আটক হয়েছেন।
পলকের মূল ফাইনান্সার হিসেবে আর টেন্ডার স্পেশালিস্ট হিসেবে সর্বজন পরিচিত হাই-টেক পার্কের উপ-পরিচালক, আতিকুল ইসলামও চেষ্টায় আছেন কখন দেশ ছাড়বেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি স্পেনে তার শালার কাছে দুর্নীতির অনেক অর্থ পাচার করেছে। বর্তমানে দেশে তার শতশত কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক রিপোর্ট হয়েছে, তদন্ত হয়েছে কিন্তু পলক প্রতিবার তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। তার নিয়োগ প্রক্রিয়াও অবৈধ।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রঞ্জিত কুমার। তিনি হাইটেক পার্কের সাবেক এমডি বিকর্নর খুব কাছের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তাকে ডাকা হয় দুর্নীতির মহারাজা হিসেবে। তিনি ভারতে পালানোর জন্য চেষ্টা করছে।
এটুআই এর এইচ ডি মিডিয়ার পূরবী মতিন। আইসিটি আর পিএম কার্যালয়ের সব ইভেন্ট তিনি দেখতেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি কানাডায় তার বোনের বাড়িতে পালিয়ে গেছে।
ডাটা সেন্টারের প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজার, একরাম। যশোরের এই একরাম পলকের সাবেক এপিএস। এর আগে, তিনি এক মন্ত্রীর এপিএস ছিলেন। তার কাছে কত টাকা আছে তার হিসাব করাটাও মুশকিল হবে।
ডাটা সেন্টার লিমিটেডের সচিব লতিফুল কবির। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এই কর্মকর্তা ডাটা সেন্টারে লুটপাটের প্রধান কারিগর। তিনি পলকের ফাইন্যান্সার হিসেবেও পরিচিত।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের টেস্টিং ম্যানেজার ও ডাটা সেন্টারের পরিচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি পলককে নারী ও টাকা দুটোই সাপ্লাই করতেন। মিডিয়া ও সিনেমা জগতে তার বেশ নামডাক। প্রচুর টাকার মালিক তিনি। সকল কন্সালটেন্ট এজ প্রকল্প, এটুআই এজেন্সি ও আইডিয়া প্রকল্পে গড়ে ৪-৫ লাখ টাকা বেতন নেয়। এরা সবাই পলক এবং জয়ের ঘনিষ্ঠ।
এ ছাড়া বর্তমান পিএস মুশফিকুর রহমান, সাবেক পিএস বর্তমানে বগুড়ার ডিসি সাইফুল ইসলাম, এটুআইয়ের চিফ ইনোভেশন স্ট্রাটেজিক ফরহাদ জাহিদ শেখ, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট আদনান ফয়সাল, মানিক মাহমুদ, শাওন। এই তালিকায় আরো আছেন আইসিটি অধিদপ্তরের ডিজি মোস্তফা কামাল, প্রোগ্রামার সৈয়দ মাহফু মাহমুদ ইশতিয়াক আহমেদ ও আব্দুল ওদুদ।
মোবাইল গেম প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রামার ইশতিয়াক হোসেন সারওয়ার ও মোস্তফা নুরুন্নবী শাকিল (বর্তমানে NTRC তে কর্মরত) এবং পরামর্শক সবুজ আল মামুন, ইমতিয়াজ আহমেদ (বর্তমানে ইডিশি প্রকল্পে কর্মরত)। এরা দ্রুতই দেশ ছাড়তে পারেন।