ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ রমজান ১৪৪৬

`রাজস্ব খাতের ব্যর্থতায় অর্থনৈতিক সংকটে সরকার'



`রাজস্ব খাতের ব্যর্থতায় অর্থনৈতিক সংকটে সরকার'

রাজস্ব খাতের ব্যর্থতায় অর্থনৈতিক দিক থেকে সরকার সংকটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন, অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। 

সোমবার (১০ জুন) দুপুর ১টার দিকে সম্পাদক পরিষদ ও নিউজ পেপার্স এসোসিয়েশন (নোয়াব) আয়োজিত অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫ এর আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। 

আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু মাত্র এই একটি রাজস্ব খাতের জন্য সব খাতে সংকটে পড়েছে সরকার। এই খাত যদি ঠিকমতো রাজস্ব আদায় করতে পারতো তাহলে সরকারকে ব্যাংক ঋণের দিকে যেতে হতো না। বরং উল্টো সরকার আরও অন্যান্য খাতে বরাদ্ধ বাড়াতে পারতো। তবে এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলছেন, সরকার রাজস্ব ব্যাবস্থাপনার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। রাজস্ব বাড়াতে হলে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তণ আনতে হবে। তাহলেই অন্যান্য খাতে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে সরকার। 

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট মুদ্রানীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম সুদের হার বাজার ভিত্তিক করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তখন আমাদের কথা শুনেনি। এখন স্বস্তির খবর হলো সুদের হার বাজার ভিত্তিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এমন একসময় এটি বাজারভিত্তিক করেছে যখন মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে। এবার সংকোচনমূলক বাজেটের কারণে ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। আমরা আশা করছি এই সময়ের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি। এই সময়টাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমবে না, কিন্তু বর্তমানে যেই দাম তার চেয়ে বাড়বে না। অর্থাৎ খাদ্যে মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমবে না তবে বর্তমানের তুলনায় বাড়বেও না। অন্যান্য খাতে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই কমে আসবে।’

প্রতি বছর বাজেটের ব্যায়ের ৪২ শতাংশ প্রশাসনিক খাতে হয় জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলছেন, সরকারের এমন এমন সেক্টর আছে যেগুলোর কোনো প্রয়োজনই নাই। এমন কিছু মন্ত্রণালয় আছে যার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সরকার সেগুলোর পিছনে অনেক অর্থ ব্যয় করছে। সরকারে এসব ব্যয় কমানো দরকার। এই সংকট থেকে উত্তোরণ করতে হলে এসব ব্যয় কমাতে হবে। এই যে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় রয়েছে, এই মন্ত্রণালয়ের কাজ কি? ব্যয় কমাতে এই মন্ত্রণালয় উঠিয়ে দেওয়া দরকার। সরকারকে বয় কমাতে হলে এমন কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিতেই হবে।

বিদ্যুত খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কেনো দেশে এতো দামে বিদ্যুত উৎপাদন করে না। আমাদের কেনো এতো অর্থ খরচ হচ্ছে। যতই চুক্তি থাকুক না কেনো সরকারকে এই সেক্টরকে রি ভিজিট করা দরকার। আদানীর বিদ্যুতের দাম এতো হবে কেনো, সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এতো বাড়তি হবে কেনো সেগুলো দেখা দরকার। প্রয়োজনে চুক্তির ধারা পরিবর্তন করতে হবে। এই খাতের ব্যয় কমাতে হবে। 

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ৷  আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পিপিআরসি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক অর্থ সচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।


   আরও সংবাদ