২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট হাত-পা বাঁধা বলির পাঠার মতো বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ৷
সোমবার (১০ জুন) সকাল ১১টায় সম্পাদক পরিষদ ও নিউজ পেপার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ নোয়াব আয়োজিত অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি৷
ওয়াহেদউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট স্বল্পকালীন না৷ সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি অর্থণীতিতে গেড়ে বসেছে৷ বাজেটে বলা হয়েছে কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে কিন্তু এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, বৈদেশিক বিনিয়োগেরও কোনো পরিবেশ নেই৷ একদিকে বলা হচ্ছে কর্মসংস্থান করা হবে অন্যদিকে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার৷ যা বেসরকারি বিনিয়োগের সাথে সাংঘর্ষিক৷ এভাবে কর্মসংস্থা বাড়ানো সম্ভব না৷
ওয়াহিদউদ্দিন বলছেন, একদিকে খেলাপি ঋণ, দুর্নীতি আর অর্থপাচার হচ্ছে অন্যদিকে করের বোঝা বাড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। বর্তমানে যে করনীতি রয়েছে সেটি দূর্বল হরিণের মতো উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলছেন, একটি দুর্বল হরিনকে বাঘ যেভাবে সহজেই শিকার করতে পারে ঠিক সেভাবেই সংকট বাড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বলছেন, যে সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সে সরকারই আবার ইন্টারনেটের উপর শুল্ক আরোপ করছে। তারা ভাবছে এতে করে রাজস্ব আদায় বাড়বে। রাজস্ব আদায় কতটুকু বাড়বে তা জানি না তবে এতে করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যেতে পারে। এতে করে রাজস্ব আদায় আরও কমার আশংকা করছেন তিনি। দেশে যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে তখনো করমুক্ত আয়ের সীমা একই রাখা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বিচেনা প্রসুত না বলে মনে হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে আরও চিন্তা করতে পারে।
কালো টাকা সাদা করার জন্য সরকার যে সুযোগ দিয়েছে এটিকেও ভালোভাবে দেখছেন না তিনি। তিনি বলছেন, যারা ব্যবসায় বিনিয়োগ করার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করছে তাদেরকে ১৫% দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অথচ যারা দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে, সরকারকে ভ্যাট-ট্যাও দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, তাদেরকে দিতে হচ্ছে ৩০% ট্যাক্স। এর মাধ্যমে যার সততার সাথে ব্যবসা করছে তারাও আগামী দিনে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স না দিয়ে কালো টাকার মালিক হতে চাইবেন। কারণ বৈধ টাকার চেয়ে কালো টাকায় ট্যাক্স কম দিতে হবে। এতে করে দেশে কালো টাকা আরও বাড়ার সংকা রয়েছে। সবমিলিয়ে ক্রমেই নৈতিকতাহীন অর্থনীতির দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। সরকার যে বাজেট দিয়েছে তা দিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব না।
এসময় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পিপিআরসি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান ইচ মনসুর, সাবেক অর্থ সচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।