বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিম্নচাপটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে অতিক্রম করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী সপ্তাহেও টানা ৬ দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বের প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। পূর্বাভাস মডেলগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন কানাডার সাসক্যাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, 'সম্ভব্য এ নিম্নচাপটিও উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী কোনো স্থানের উপকূল দিয়ে ভারতের স্থলভাগে প্রবেশের সম্ভাবনা নির্দেশ করছে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।'
'ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, সম্ভব্য এ নিম্নচাপটি ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানের উপকূল দিয়ে ভারতের স্থলভাগে প্রবেশ করে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে', বলেন তিনি।
মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, পক্ষান্তরে আমেরিকান মডেল অনুযায়ী, নিম্নচাপটি ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের পশ্চিমে মিয়ানমার সংলগ্ন পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভব্য এ নিম্নচাপটির প্রভাবে আবারও ৬ দিন দেশব্যাপী বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ গবেষক বলেন, নিম্নচাপ সৃষ্টির প্রথম ২ দিন, অর্থাৎ ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর আবারও দেশব্যাপী মাঝারি থেকে ভারী এবং ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করেছে প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো।
'নিম্নচাপটির কারণে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টির (২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ মিলিমিটার) সম্ভাবনা রয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে। যেহেতু নিম্নচাপটি এ ২ বিভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে', বলেন তিনি।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আগামী সপ্তাহের সম্ভাব্য নিম্নচাপটিও ২৫ সেপ্টেম্বরের অমাবস্যার মাত্র ২ থেকে ৩ দিন আগে সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নিম্নচাপের কেন্দ্র যদি পূর্ব নির্দেশিত পথই অনুসরণ করে, তাহলে সম্ভব্য নিম্নচাপটির কারণে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি উচ্চতায় উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর সৃষ্ট লঘুচাপটির প্রভাব এখন আর বাংলাদেশের ওপর তেমন নেই। তবে, লঘুচাপটি এখনো সুস্পষ্টভাবে সক্রিয় ও বিপরীত দিকে প্রবাহমান। এ লঘুচাপটির একটি বর্ধিত অংশ আবার ঘনীভূত হয়ে আগামী ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরে ভারতের স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে, জানতে চাইলে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, এত আগে থেকেই সেটা বলা যাচ্ছে না। এত আগে বললে সেটা সঠিক নাও হতে পারে। আমরা সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ২ বার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেই।