চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি, আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স (বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল) স্থাপনের দাবিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২২ জানুয়ারি) চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্য নিবাহী সংসদের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ এবং সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাসেল স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত চাকরি প্রার্থীরা বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছে। আপনি জানেন নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর পাতা ৩২ এবং শিক্ষা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে বলা আছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২০১১ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং চাকরি শেষে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়া ক্ষেত্রে অন্তরায়।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনে (বিসিএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর, সরকারি নার্সিং এ ৩৫ বছর এবং বেসরকারি স্কুল/কলেজে ৩৫ বছর। দুঃখজনক হলেও সত্যি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থাগুলো তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সরকারি মানদন্ড অনুযায়ী ৩০ বছরকেই অনুসরণ করে। বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের যুবক বলা হলেও ৩০ বছর হলেই তাদেরকে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীতকরণ করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।
বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫-৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৩৫ বছর,নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলােদশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রায় সকল প্রকার চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি/পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার বেশি থাকার সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারনে চাকুরিতে আবেদনের বয়সসীমা আরো ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিত ভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সুপারিশ করলেও কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তাই লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর এবং অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হোক।
চাকরিতে আবেদনের ফি কমানোর দাবি জানিয়ে এতে বলা হয়, চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে (১ম শ্রেণীতে ২০০ টাকা, ২য় শ্রেণীতে ১৫০ টাকা, ৩য় শ্রেণীতে ১০০ টাকা, ৪র্থ শ্রেণীতে ৫০ টাকা) প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে। একই তারিখে একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
চাকরিপ্রার্থীদের এই সংগঠন দাবি জানিয়ে আরো বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী, আইন অনুষদের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যূরাল নির্মাণসহ দাবির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে স্থান নির্ধারণের জন্য আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ “বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স” এর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্য নিবাহী সংসদের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ বিবার্তাকে বলেন, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি আমাদের দাবির বিষয়গুলো খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরবেন বলেছেন। আমরা আশা করছি, অচিরেই আমাদের দাবিগুলো পূরণ হবে।