লাগাম ছাড়া ঋণ খেলাপী আর অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একের পর এক নেতিবাচক খবর আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুল নীতির কারণে নিজেদের অর্থ তুলে নিতে শুরু করেছে মানুষ। এতদিন এ কাতারে নিম্ন আর মধ্যবিত্তরা থাকলেও এখন যক্ত হয়েছে কোটিপতিরা। অনেকেই টাকা তুলে নিয়ে একাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছেন। তবে এটিকে খুব একটা নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন না অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কোটি টাকার আমানতকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কমেছে ১ হাজারের বেশি। পাশাপাশি কোটিপতিদের আমানতও কমে গেছে। গত তিন মাসে আমানত কমার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর হিসাব ছিল ১৫ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ২২৭টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত জমা হয়েছে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা আছে ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যাংক হিসাব ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। ওই সময় এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ১৮টি। একই সময়ে এসব হিসাবের বিপরীতে জমা টাকার পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশই জমা করেছেন কোটি টাকার হিসাবধারীরা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৬২৩টিতে, যেখানে আমানত জমা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির আমানতের ১২ হাজার ৪৪৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৩৯৬টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৯৬১টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২২১টি এবং ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৮৭৫টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০১টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৬০টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাবসংখ্যা ৬৮১টি। তা ছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮২৬টি।
অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটকে সামনে রেখেই মূলত কোটিপতিরা টাকা তুলে নিয়েছেন। বাজেটে ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে জমা টাকার উপর সরকার ট্যাক্স বাড়িয়ে দেতে পারে সে সঙ্কা থেকেও অনেকে টাকা তুলে নিতে পারেন। সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিচ্ছে কম ট্যাক্সে সেকারনেও কোটিপতিরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে স্থাবর সম্পত্তি কেনার কাজে এসব টাকা খরচ করতে পারেন। বাজেটে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি খরচ বেড়ে যেতে পারে দেখে আগে থেকেই এসব কোটিপতিরা আগে থেকেই ফ্ল্যাট কিংবা জমি অথবা স্বর্ণালঙ্কার কেনিার দিকে মনোযোগী হয়েছে।
এদিকে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই টাকা তুলে নিতে পারে। ব্যাংকে কোটিপতির হিসাব কমে যাওয়া খুব একটা নেতিবাচক না। এটিকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখা যেতে পারে। তবে ছোটখাটো হিসাব যাদের আছে তারা ব্যাংক খাতের নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে তাদের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। অনেকেই আবার জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিসাব ক্লোজ করে দিচ্ছেন।