ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘নিউইর্য়ক পুলিশে নিজেদের সর্ম্পকে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পেরেছি’



‘নিউইর্য়ক পুলিশে নিজেদের সর্ম্পকে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পেরেছি’

এস.এম.হক, নিউইর্য়ক থেকে----

বিশ্বের সর্ববৃহৎ পুলিশ বাহিনী নিউইর্য়ক পুলিশ বিভাগে (এনওয়াইপিডি)। এই বাহিনীতে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন হাজারো বাংলাদেশি। দিনদিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মেধা ও যোগ্যতায় এ বিভাগের ক্যাপ্টেন, লেফট্যানেন্ট এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় অধিষ্ঠিত হয়েছেন বাংলাদেশিরা। তম্মধ্যে একজন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র লেফট্যানেন্ট সাজেদুর রহমান। বর্তমানে তিনি নিউইর্য়ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডির) সদর দপ্তরে অবস্থিত ইক্যুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপরচ্যুনিটি (ই.ই.ও) ডিভিশিনে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন ছাড়পত্র অনুরোধের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত। ই.ই.ও ডিভিশনে উচ্চতর পদে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি। নিউইর্য়ক পুলিশে বাংলাদেশিদের নের্তৃত্ব, পদায়ন, যোগ্যতা, কাজের স্বীকৃতি এবং বর্হিবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন সর্ম্পকে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: নিউইর্য়ক পুলিশ বিভাগে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? 

সাজেদুর রহমান: বিশ্বের অন্যতম পুলিশ সংস্থা এনওয়াইপিডি। এই সংস্থাটি গত ১৮০ বছর ধরে বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত নিউইর্য়ক সিটির সেবা করে আসছে।একজন পুলিশ অফিসার হওয়া সহজ নয়। কিন্তু আমাদের পেশা নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত কারণ আমরাই আমাদের নিউইর্য়কবাসীদের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকি। এই সংস্থাটি নিরপেক্ষ, যা কিনা প্রত্যেকের যোগ্যতাকে সমান গুরুত্ব দেয়। আমি সত্যিই ভাগ্যবান এবং এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের একজন লেফটেন্যান্ট হতে পেরে সম্মানিত। 

প্রশ্ন: অনেক পেশা থাকতে পুলিশকে কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন? 

সাজেদুর রহমান : আমি একজন পুলিশ অফিসার হয়েছি যেন কমিউনিটিকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের সেবা সহযোগিতা দিয়ে যেতে পারি। যার ফলে কমিউনিটি একটা ভাল অবস্থানে পৌছালে সবাই উপকৃত হবে। এছাড়া আরেকটি কারণ হল চাকরির নিরাপত্তা। একজন সরকারী কর্মচারী হিসেবে আমরা খুব বেশি উপার্জন করি না। তবে ভাল স্বাস্থ্য সুবিধা এবং দুর্দান্ত পেনশন ব্যবস্থা, যা আমার দৃষ্টিতে পুলিশ অফিসার হওয়ার অন্যতম কারণ।

প্রশ্ন: এই যে পুলিশে এলেন এর পিছনে কার বেশি অবদান বা ভূমিকা রয়েছে?

সাজেদুর রহমান : আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই আজকের এই অবস্থানে আসার জন্য। এরপর চলে আসে আমার মরহুম বাবা মায়ের অবদানের কথা, যাদের অসামান্য ত্যাগের কারণে আমি এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এছাড়া আমার স্ত্রী আর দুই মেয়ে আমার জন্য অনেক ত্যাগ করেছে। তাই আমি পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে একের পর এক পদোন্নতি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীণ হতে পেরেছি। 

প্রশ্ন: নিউইর্য়ক পুলিশে বাংলাদেশিদের অগ্রগতি বা কাজের স্বীকৃতি সর্ম্পকে নিজের মূল্যায়ন কী? 

সাজেদুর রহমান : আমরা প্রথম প্রজম্মের বাংলাদেশিরা নিউইর্য়ক পুলিশ বিভাগে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি, যা মিড়িয়ার কল্যাণে ইতিমধ্যে কমিউনিটি তথা সারাদেশবাসীরা অবগত। এ জন্য এনওয়াইপিডি বাংলাদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় পেশায় পরিণত হয়েছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না । আমাদের আরোও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে । কিন্তু আমরা সঠিক পথে রয়েছি আরো ভালো পজিশনে যাওয়ার জন্য। 

প্রশ্ন: আপনার সফল হওয়ার পিছনে কোন কোন বিষয় মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল?

সাজেদুর রহমান: আল্লাহর অশেষ রহমত আর আমার বাবা মায়ের দোয়াই আমার সফলতার মূল কারণ। উপরন্তু আমি বিশ্বাস করি সাফল্যের জন্য আমার ফোকাসও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার পরিবার এবং আপনাদের প্রার্থনা ছাড়া এতদূর যেতে পারতাম না। 

প্রশ্ন: সব মিলিয়ে এই বিভাগে বাংলাদেশিদের নেতৃত্ব নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

সাজেদুর রহমান : আমরা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে নিউইর্য়ক পুলিশ বিভাগের মধ্যে নিজেদের সর্ম্পকে একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি । আপনি যদি সুপারভাইজার পদে বাংলাদেশিদের সাফল্যের হার দেখেন যার মধ্যে বেসামরিক ও নিয়মিত বাহিনীর সদস্যসহ আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, এনওয়াইপিডির অন্যান্য সদস্যরা আমাদের সাফল্যের জন্য ঈর্ষান্বিত। নিউইর্য়ক পুলিশে বাংলাদশি বশোংদ্ভূত অফিসার, ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট, স্কুল সেইফটি এজেন্টসহ অন্যান্য ইউনিটে বাংলাদেশিদের একটি সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। 

প্রশ্ন:  বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও কর্মজীবন বিকাশে নিউইর্য়ক পুলিশের কোন ট্রেনিং কোর্সগুলো বাংলাদেশ পুলিশে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে আপনার মনে হয়? 

সাজেদুর রহমান : সাইবার নিরাপত্তা বর্তমান বিশ্বে একটি প্রকৃত উদ্বেগ। আমি বিশ্বাস করি এনওয়াইপিডি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগকে সাইবার নিরাপত্তা সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এছাড়াও আমি বিশ্বাস করি সন্ত্রাস দমন প্রশিক্ষণ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি সহায়ক হবে । 

প্রশ্ন: আপনাকে যদি অতিথি প্রশিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়, এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই ।

সাজেদুর রহমান : আসলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমেরিকায় চলে আসি, তাই বাংলাদেশের জন্য কিছু করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। বাংলাদেশ পুলিশের অতিথি প্রশিক্ষক হয়ে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারলে এর চেয়ে আনন্দের কি আর আছে! এ ধরনের সুযোগ আসে তাহলে আমি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে সমতা এবং অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারি। আমি দীর্ঘদিন ধরে নিউইর্য়ক পুলিশের ইক্যুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপর্চ্যুনিটি (ই.ই.ও) এর অধীনে একজন তদন্তকারী সুপারভাইজার ছিলাম। প্রত্যেক নিউইর্য়ক পুলিশ সদস্যদের সাথে সমান আচরণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সাথে শেয়ার করতে পারি।

সাজেদুর রহমান যশোরের বাঘাপাড়ার দহাকুলো গ্রামের প্রয়াত বদর উদ্দিন বিশ্বাস ও প্রয়াত রিজিয়া খাতুনের ছেলে। তিনি যশোরের বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্য্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এন্ড পলিমার সায়েন্স (সি.ই.পি) বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৯৭ সালে ডিভি লটারীতে আমেরিকায় অভিবাসী হন। পরে তিনি নিউইর্য়ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ওল্ড ওয়েস্টবারী থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন।

২০০৮ সালে নিউইর্য়ক পুলিশ বিভাগে (এনওয়াইপিডিতে) পুলিশ অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে সাজের্ন্ট হন এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে লেফট্যানেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পান। পদোন্নতি পাওয়ার পূর্বে তিনি এনওয়াইপিডিতে ইক্যুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপর্চ্যুনিটি (ই.ই.ও) এর অধীনে তদন্তকারী সুপারভাইজারের দায়িত্বে ছিলেন। দুই কন্যা ফতিমা রহমান ও খাদিজা রহমান এবং সহধর্মিনী হোসেন আরা রহমানকে নিয়ে কুইন্সে বসবাস করেন সাজেদুর রহমান।


   আরও সংবাদ