মহারাষ্ট্রের সাতারার রহিমতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ তার। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পরিবার চলে যায় পুনেতে। থাকতেন ছোট্ট একটি কক্ষের বাড়িতে। বড় হয়েছেন দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। অনেক কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। বেশিরভাগ সময়ই বৃত্তির টাকায় পড়ার খরচ চালিয়েছেন। বলছিলাম ভারত বিকাশ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হনমন্তরাও রামদাস গায়কোয়াড়’র কথা। হনমন্তরাওয়ের বাবা ছিলেন একজন নিম্ন পদের কেরানি। তার ছিল ডায়াবেটিস এবং বেতনের সিংহভাগই চলে যেত তার চিকিৎসায়। ইলেকট্রনিক্সে ডিপ্লোমার দ্বিতীয় বর্ষে যখন তখন হারান বাবাকে।
সংসার চালাতে মায়ের সব গয়না বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি মৌসুমের সময় আম বিক্রি করেছেন এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি ২ হাজার কোটি টাকার মালিক। যখন তিনি ডিপ্লোমা করছিলেন তখন সেলসম্যানের কাজও করেছেন। ভালো রেজাল্ট করতে হলে কোচিং করতে হবে। কিন্তু সেই টাকা কোথায় পাবেন। একটি কোম্পানির জ্যাম এবং সস বিক্রি করতেন দ্বারে দ্বারে ঘুরে। সেখান থেকে মাসে আয় হতো ৫ হাজার টাকা।
হনমন্তরাও ১৯৯৪ সালে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন বিখ্যাত কোম্পানি টাটা মোটরসে। মাত্র তিন বছরেই নিজের কাজের দক্ষতার জন্য কোম্পানির মধ্যে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। তিনি উদ্ভাবনী পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন গাড়ির জন্য পুরোনো তারগুলো পুনরায় ব্যবহারের উপায় বের করেছিলেন। এতে টাটার সঞ্চয় হয়েছিল ২ কোটি টাকা। এই পদক্ষেপটি লাভজনক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিটিকে সেই তারগুলো নষ্ট করা থেকেও বাঁচিয়েছিল।
হনমন্তরাওয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো দেশে। দিন দিন উন্নতিও করছিলেন কাজে। এমন সময় তার গ্রামের কিছু লোক আসে চাকরির জন্য। তখন তিনি তার কোম্পানির ম্যানেজারকে তাদের নিয়োগের জন্য অনুরোধও করেন। তবে পার্মানেন্ট চাকরি না হলেও চুক্তিভিত্তিক চাকরি হয়েছিল তাদের। হনমন্তরাও সেই আটজন লোক নিয়েই পরবর্তিতে শুরু করেছিলেন ভারত বিকাশ গ্রুপ। গ্রামের আরও মানুষ আসতে থাকে তার কাছে কাজের সন্ধানে। সবাইকেই হনমন্ত কাজে লাগিয়ে দেন নিজের কোম্পানিতে। ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকে তার কোম্পানি।
একই বছরই তার কোম্পানি বেঙ্গালুরুতে জিই পাওয়ারের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি পায়। যা রাতারাতি তাদের অবস্থা পরিবর্তন করে দিয়েছিল। পরের কয়েক মাসে আরও আটটি চুক্তি পান। হায়দ্রাবাদ এবং চেন্নাই থেকেও প্রচুর কাজ আসতে থাকে তার কোম্পানিতে। হনমন্তরাও বলেছেন যে, তার কর্মীরা ভালো প্রশিক্ষিত, বিনয়ী এবং আন্তরিক ছিল। আর এই গুণাবলীগুলো তাদের কাজে প্রতিফলিত হয়েছিল। ফলে এতো দ্রুত তারা অন্যদের মধ্যে পরিচিতি পায়। তিনি স্থানীয় ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে গৃহস্থালি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয় কাজগুলো প্রশিক্ষণ দিতেন কর্মীদের।
২০০৩ সালে ভারতের পার্লামেন্ট হাউসের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয় বিকাশ গ্রুপের। এরপর ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিচ্ছন্নতার কাজের চুক্তি পায় ভারত বিকাশ গ্রুপ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হনমন্তরাওকে।
তার কোম্পানি ২০০৫ সালে ১৬ কোটি রুপি আয় করে। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০০ কোটি রুপিতে। শেষ ভারত বিকাশ গ্রুপ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা শুরু করেছে। যা থেকে এরইমধ্যে ৬৫ লাখেরও বেশি লোক উপকৃত হয়েছে। সেবাটি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের অধীনে মহারাষ্ট্র, জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখে উপলব্ধ। এজন্য ব্যবহারকারীকে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেস ১০৮ নম্বরে ডায়াল করতে হবে। শহরের যে কোনো স্থানে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে অ্যাম্বুলেন্স।
তার কোম্পানির মানুষেরা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে। ঘরবাড়ি অফিস পরিষ্কার, বাগান দেখাশোনা, চিকিৎসা এবং কৃষি খাতসহ নানান কাজ করে। যা প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের উপকার করে। ভারত বিকাশ গ্রুপ ক্লায়েন্টদের আউটসোর্স সেবাও প্রদান করে। অন্যদিকে এটি গ্রামীণ ভারত জুড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে হাজার হাজার মানুষের।
বিমানবন্দর, কর্পোরেট এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সহ ৮৫০টি কোম্পানি এবং এলাকায় ভারত বিকাশ গ্রুপের কার্যক্রম রয়েছে। ভারত বিকাশ গ্রুপের নাম শোনেনি এমন মানুষ কমই রয়েছেন। সব ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীর সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি।
সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া