মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আগামী নভেম্বরের এই আয়োজনকে ঘিরে গড়ে তুলতে হয়েছে স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। আর এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে করছে অভিবাসী শ্রমিকরা। তবে তাদের মজুরি ঠিক মতো দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে প্রতিবাদে নামে একটি শ্রমিক অধিকার গোষ্ঠী। এর জেরে গত সেমবার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের দেশে পাঠানোর সিদ্ধান নিয়েছে কাতার।
দ্য গার্ডিয়ান গত এপ্রিলে জানিয়েছিল, কাতারে অভিবাসী বাংলাদেশিরা ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেড় থেকে ২ বিলিয় মার্কিন ডলার ফি দিয়েছে। লন্ডনভিত্তিক শ্রম অধিকার প্রচার সংস্থা ইকুইডেমের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, সম্প্রতি দেশটির আল বান্দারি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের দোহা অফিসের সামনে কমপক্ষে ৬০ জন অভিবাসী শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে আবার কিছু শ্রমিক আছে-যাদের সাত মাস ধরে কোনো ধরনের বেতন দেওয়া হচ্ছে না।
ইকুইডেমের প্রধান মুস্তফা কাদরি বলেছেন, আমরা বিক্ষোভে জড়িত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যার মধ্যে একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন যাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিক্ষোভে জড়িত নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত, মিশর এবং ফিলিপাইনের শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। প্রতিবাদ করা কিছু অভিবাসী শ্রমিককে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে কতজন শ্রমিককে আটক বা ফেরত পাঠানো হচ্ছে তা জানা যায়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, গ্যাস সমৃদ্ধ কাতারের জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ যার মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ বিদেশী শ্রমিক রয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ৮ লাখ ২১ হাজার ৮৫৬ বাংলাদেশি শ্রমিক কাতারে কর্মরত আছেন। এর আগে একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ প্রকল্পের শ্রমিকদের ওপর ২১১টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২৪ হাজারের বেশি শ্রমিক নির্যাতিত হয়েছেন , যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের।
এদিকে দেশটির সরকার জানিয়েছে, ১৪ আগস্ট কিছু শ্রমিক বিক্ষোভ করেছে। নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ করায় এসব অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, যেসব অভিবাসী শ্রমিক তাদের মজুরি পাননি, তাদের পাওনা মজুরি ও সুবিধা দেওয়া হবে। আর অভিযুক্ত গ্রুপ আল বান্দারি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে আগে থেকেই তদন্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে হিউম্যান রাইটস জানিয়েছিল, কাতারের অভিবাসী শ্রমিকরা একটি শোষণমূলক শ্রম ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। জোরপূর্বক আটকে রাখা, ন্যায্য মজুরি না দেওয়া, আবাসন সংকট, চলাফেরার স্বাধীনতা না থাকাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে সেখানে অভিবাসী শ্রমিকরা রয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের একটি তদন্তে দেখা গেছে, ২০১০ সালে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার পাওয়ার পর থেকে গত বছরের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১,০১৮ অভিবাসী শ্রমিক কাতারে গিয়ে মারা গেছেন। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ জন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা থেকে যাওয়া অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন।