রেজাউল করিম
এবারও অনিশ্চিতায় জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা। কারণ হিসেবে বোঝা গেলো করোনার প্রভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এদিকে ২০২২ সালের এসএসসি হওয়ার কথা ছিলো ফেব্রুয়ারিতে। এখনও হয়নি। জুনের মাঝামাঝি সময়ে হওয়ার কথা রয়েছে। আগেই বলে রাখি এসএসসি পরীক্ষা কিন্তু শর্ট সিলেবাসে নেওয়া হচ্ছে।
এসএসসি সম্পর্কে আশ্চর্যের আরেকটি সংবাদ হচ্ছে সরকার ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষাও শর্ট সিলেবাসে নেওয়ার কথা ভাবছে। এটা দুর্বল ছাত্রদের জন্য সুসংবাদ হলেও সবলদের জন্য অত্যন্ত দুঃসংবাদ। শিক্ষা নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও করোনা রয়ে গেছে।
শর্ট শিলেবাস বলতে কি বুঝায়? নিশ্চিত পরিধি ছোট। অথচ শর্ট সিলেবাস হিসেবে ধরা হচ্ছে পরিধিও ছোট, বিষয়ও কম। বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বই সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে না। শিক্ষার্থীকে নির্ধারিত শ্রেণির ন্যুনতম জ্ঞান অর্জন করাতে হলে সকল পাঠ্য বই পড়া প্রয়োজন। করোনার প্রভাবে বর্তমানে যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তাতে পাঠ্য বই সম্পর্কেও ধারণা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসএসসিতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে বিভাগীয় বিষয়গুলো (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা)। এতে শিক্ষার্থীরা মৌলিক জ্ঞান অর্জন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। মৌলিক জ্ঞানের জন্য চাই বাংলা, ইংরেজি, গণিত। নৈতিক জ্ঞানের জন্য চাই নৈতিক শিক্ষা বা ধর্ম। এসব বিষয় বাদে মৌলিক জ্ঞান অর্জন সম্ভব না। বিভাগীয় পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী মেধার সঠিক মূল্যয়নও সম্ভব না।
করোনার শেষ সময়েও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব ছিলো। নীতিনির্ধারকরা চালায়নি ঠিক আছে কিন্তু এখনও শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে না কেন? এখন পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন না করে পড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কিভাবে পুরে সিলেবাস শেষ করানো যায় সেব্যাপারে শিক্ষকদের কৌশলী ও পরিশ্রমি হতে হবে।
করোনাকালের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবার এসএসসি দিবে। কি শিখলো ওরা? তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে। যখন ৬ বই পড়া শুরু তখন থেকে ক্লাস পাচ্ছে না। এক লাফে ষষ্ঠ শ্রেণির ১০ বই। প্রথম শ্রেণিতে অক্ষর জ্ঞান না শিখে তৃতীয় শ্রেণিতে ৬ বই পড়ছে। কি বুঝবে ওরা? এদেরকে সমন্বয় করা প্রয়োজন। পূর্বের পড়াগুলো ওদেরকে পড়ানো প্রয়োজন। তা না করে এখনও যদি করোনার প্রভাব দেখিয়ে পরীক্ষা শর্ট করতে থাকি তাহলে জাতী মেধাশূণ্য হয়ে পড়বে।
করোনাকালে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়েছে। করোনা চলে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভ্যাসটা পরিবর্তন হয়নি। এখনও ওরা পড়ার টেবিলে ফিরেনি। এভাবে আর কতোদিন? জলদি ওদের ফেরাতে হবে। করোনা বলে ওদের জীবনটা নষ্ট করা উচিৎ হবে না। ওদের মধ্যে কেও যদি বুঝতে পারে আমরা ওদের সাথে অন্যায় করছি, দ্বায়িত্ব পালন করছি না। এমন একটা সময় আসবে ওরা ঘুরে দাড়াবে, ধিক্কার দিবে। ধিক্কার পাওয়ার আগে ওদের সঠিক পথ দেখাতে হবে।
লেখক- সংবাদকর্মী